Search
Close this search box.

আযানের সুরে শুরু শ্যামা মায়ের পূজা—নিংড়ার আড়াইশো বছরের সম্প্রীতির গল্প

আযানের সুরে শুরু শ্যামা মায়ের পূজা—নিংড়ার আড়াইশো বছরের সম্প্রীতির গল্প

অন্ধকার ভোর কাটেনি এখনও।

গ্রামের মাথা বরাবর ভেসে আসে পুব দিকের প্রথম আলো।

ঠিক সেই সময় নীরবতা ভেঙে প্রতিধ্বনিত হয় মসজিদের পবিত্র আযান।

আশ্চর্যের বিষয়—এই আযানের সুরেই শুরু হয় শ্যামা মায়ের আরাধনা।

এ যেন ধর্ম নয়, মানুষই এখানে মুখ্য। আর সেই মানুষই গড়ে তুলেছে নিংড়া গ্রামের আড়াইশো বছরের পুরনো এক অসামান্য গল্প—সম্প্রীতির গল্প।

কথিত আছে, বহু যুগ আগে এই অঞ্চলে হানা দেয় ভয়াবহ কলেরা। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছিল। সেই মৃত্যুভয়ে যখন মানুষ দিশেহারা, তখন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই মিলেই সৃষ্টি করলেন এক নতুন বিশ্বাস—মা ওলা দেবীর আরাধনা।

সেই পুজো আজও চলে, ম্যান্ডপের গা ঘেঁষে থাকা গল্পগুলোর মতোই অমলিন।

নিযুক্ত মুসলিম মৌলবী পুজো মণ্ডপে এসে দাঁড়ান। মানুষের কোলাহল থেমে যায়। তিনি আকাশের দিকে মুখ তুলে প্রথম আযানটি দেন।
সুর থেমে গেলে তাঁর হাতেই প্রথম বিলানো হয় হরিলুটের বাতাসা। যেন এই বিনিময়ের মধ্যেই মিলেমিশে যায় দুটি ধর্মের দুটি পবিত্র সংস্কার।

পুজোর আগের দিনগুলিতে গ্রাম জুড়ে দেখা যায় এক অদ্ভুত চিত্র—পুজো কমিটির লোকজন মুসলিম বাড়িতে বাড়িতে চাল ভিক্ষা করছেন। কিন্তু কারও মনে একটুও দুঃখ বা সংকোচ নেই। কারণ এটাও রীতিরই অংশ।
সেই চাল বিক্রি করেই কেনা হয় পুজোর নৈবেদ্য—বাতাসা, গুড়-পাটালি, আর নানা উপাচার।

আর তাই, পুজোর প্রথম বাতাসা বিলান সেই মৌলবীই।

মন্দিরের পুরোহিত হেসে বলেন,
“কলেরার সময়ে মানুষ মানুষকে ধরেছিল। ধর্ম নয়। সেই বন্ধন এখনও টিকে আছে। তাই আজও আযানের সুরে মায়ের পূজা শুরু হয়।”

নিংড়ার কালীপুজো শুধু পুজো নয়—এ এক জীবন্ত স্মৃতি।
এখানে আযান আর ঘণ্টাধ্বনি একসঙ্গে বাজে।
এখানে বাতাসায় মেশে ধর্ম-নির্বিশেষ মানুষের ভালোবাসা।
এখানে পূজা শুরু হয় বিশ্বাসে, শেষ হয় বন্ধুত্বে।

এ যেন একটাই বার্তা মনে করিয়ে দেয়—
ধর্ম আলাদা, হৃদয় এক। আর সেই হৃদয়ের সুরেই শুরু হয় মায়ের আরাধনা।

Share this article

More News

ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *