হাবরার যশোর রোডে অসহায় এক মায়ের আর্তচিৎকার
দুই ছেলের অবহেলায় রাস্তায় ফেলে যাওয়া বৃদ্ধার চোখে আজও অপেক্ষা…
হাবরার যশোর রোড ধরে যারা যাচ্ছিলেন,
কেউই প্রথমে বুঝতে পারেননি কী অশ্রুসিক্ত ছবি অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য।
রাস্তার এক ধারে বসে ছিলেন এক বয়স্ক মহিলা—শীতেতে জমে যাওয়ার মতো কাঁপছেন,
চোখে অসহায়তা, শরীরে কোনো শীতবস্ত্র নেই।
পথচলতি মানুষ ভেবেছিলেন হয়তো তিনি পথ ভুলে গেছেন।
কিন্তু কাছে গিয়ে কথা বলতে গিয়েই যেন বুকের ভেতর ছুরি বসিয়ে দেওয়ার মতো সত্য ভেসে ওঠে—
দুই ছেলের মা তিনি। অথচ সেই দুই ছেলেই নাকি মাকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেছে!
নিজের নামটা পর্যন্ত ভাল করে বলতে পারছিলেন না অসহায় ওই মহিলা। চোখে আতঙ্ক, মুখে একটাই প্রশ্ন—
“আমার বাড়ি… কোনদিকে?”
শীতের রাত্রি… ঠান্ডায় তাঁর ঠোঁট নীল হয়ে আসছিল। কম্পমান হাতদুটো কোলের ওপর শক্ত করে চেপে ধরে বসে ছিলেন তিনি। যেন সারা পৃথিবী থেকে নিঃসঙ্গ একা হয়ে পড়েছেন।
এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে আসেন সমাজসেবী দেবজ্যোতি দাম। কাছে গিয়ে তিনি যেন নিজেও থমকে যান—
একটা মা… এমন অবস্থায়?
মুহূর্তেই তিনি নিজের শীতবস্ত্র দেন বৃদ্ধাকে, দৌড়ে গিয়ে ওষুধ কিনে আনেন। তাঁর চোখেও সেই সময় পানি চিকচিক করছিল। তিনি শুধু বলেছিলেন—
“মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কাজ।”
কিছুক্ষণ পর পৌঁছান হাবরা ট্রাফিক গার্ডের হোম গার্ড রাকেশ মণ্ডল। তিনি জানান, বৃদ্ধা নিজের বাড়ির ঠিকানা পর্যন্ত মনে করতে পারছিলেন না। পরে অনুমান করা হয় তাঁর বাড়ি চাকদা থানা এলাকায়। মানবিকতার খাতিরে তাঁকে আশ্রয়ের জন্য পাঠানো হয় বানিপুর বিবেকানন্দ হোমে।
কিন্তু তাঁর চোখে তখনও একটাই প্রশ্ন বারবার ঘুরে বেড়াচ্ছিল—
“আমার ছেলেরা কোথায় গেল?”
মা কখনো সন্তানকে ফেলে যায় না…
কিন্তু সন্তান কি পারে?
আজও প্রশ্নটা বাতাসে কাঁদছে—
যে মায়ের কোলে মাথা রেখে দুই ছেলে বড় হল, সেই মায়েকেই কি একদিন রাস্তায় ফেলে দেওয়া যায়?
মানুষের সভ্যতার এত উন্নতি—কিন্তু মায়ের অসহায় চোখের জল এখনো আমাদের মানবতাকে প্রশ্ন করে—
আমরা সত্যিই মানুষ তো?













