Search
Close this search box.

শিরিশ গাছের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা রঙের গল্প

শিরিশ গাছের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা রঙের গল্প

হাবরার ভোরের সেই রহস্যময় দল

ভোরের আলো সবে ফুঁটে উঠেছে।

হাবরার নিরিবিলি রাস্তা তখনও গুমোট ঘুমে ঢুলছে।

এমন সময় হালকা শব্দ করে থামে একটি পুরনো সাইকেল।

সঙ্গে আরও দু’জন।

ব্যাগ কাঁধে, হাতে ছুরি আর বাঁশের পাত।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে—
“গাছ কাটতে এসেছে নাকি?”

কিন্তু সত্যিটা তার চেয়েও বেশি আশ্চর্যের।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছোট্ট গ্রাম থেকে ভোররাতে বের হয় মুজাফর। তার চোখে একরাশ আশার ঝিলিক।
গন্তব্য—হাবরা।
কারণ এখন শীতের শুরু, আর এই সময়েই শিশু ও শিরিশ গাছে জন্মায় সেই বিশেষ ছত্রাক।

যে ছত্রাক—
কেউ গুরুত্ব দেয় না,
অচেনা, তুচ্ছ,
গাছের গায়ে সাদাটে দাগের মতো দেখায়…

কিন্তু মুজাফরের কাছে এটাই মূল্যবান সোনা।

“আস্তে, খুব আস্তে তুলে নাও… গাছের ক্ষতি যেন না হয়,”
নরম গলায় বলে ওঠে মুজাফর।

তারা ছুরি চালায় না কেটে নেওয়ার জন্য,
বরং শুধু তুলে নেওয়ার জন্য।
গাছের গায়ে আঙুলের মতো ছুঁয়ে দেখে ভেজা ছত্রাক।

মানুষজন তখন পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাকাচ্ছে,
কেউ জিজ্ঞেস করছে—
“কী তুলছেন?”

মুজাফর শুধু হেসে বলে—
“রং।”

সেই এক কথায় থমকে যায় অনেকে।
“গাছের ছত্রাক থেকে রং?”

হ্যাঁ।
এটাই প্রকৃতির গোপন খাতা, যার গল্প খুব কম মানুষ জানে।

 

সারা সকাল ছত্রাক তোলা শেষে তাঁরা ফিরে যান অস্থায়ী আস্তানায়।
সেখানে ছত্রাকগুলো বিছিয়ে রাখা হয় ছায়ায়।
তিন থেকে চার দিন ধরে বাতাসে শুকোতে থাকে সেসব সাদা-ধূসর টুকরো।

রোদে রাখা যাবে না—
প্রকৃতির রঙ নষ্ট হয়ে যায়।
এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে চুপচাপ এক সমঝোতা।

এভাবে শুকোতে শুকোতে বদলে যায় ছত্রাকের গুণ।
তারপর কাঠের খোল বা পেষণ যন্ত্রে গুঁড়ো হয়।
গুঁড়ো থেকে আসে রঙের জন্ম।

লালচে, বাদামি, হলুদ, ধূসর—
সবাই প্রকৃতির সন্তান।

মুজাফরদের সংগ্রহ শেষ হলে সে ছত্রাক দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রক্রিয়াকরণে যায়।
তারপর পুরুলিয়ার কারিগরদের হাতে পৌঁছে রঙে রূপান্তরিত হয়।

যে রঙ—
হাতে রঙ লাগলেও রাসায়নিকের জ্বালা নেই,
শিশুর খেলনার জন্য নিরাপদ,
মাটির প্রদীপে লাগে,
হস্তশিল্পে জীবন দেয়।

হাবরার বাসিন্দারা বলছেন—
“প্রথমে ভাবলাম গাছ কাটছে! পরে শুনে অবাক হলাম—ছত্রাক নাকি রংয়ের জন্য!”

মাঝে মাঝে দেখা যায়,
কেউ দাঁড়িয়ে বড়ো উৎসাহ নিয়ে দেখছে,
কেউ ভিডিও করছে
—এই অচেনা কাজটা মানুষকে কৌতূহলী করে তুলেছে।

রাসায়নিক রঙে ভরা পৃথিবীতে
মুজাফরদের ছত্রাক-তোলা যেন
প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার আরেকটা পথ।

মাটির গন্ধে ভরা রং,
গাছের গায়ে জন্মানো জীবনের চিহ্ন,
আর মানুষের হাতের পরিশ্রম—
সব মিলিয়ে এক অনন্য গল্প হয়ে উঠছে হাবরার প্রতিটি ভোর।

Share this article

More News

ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।ভোরের সুরে ভরপুর এক গ্রাম কোয়েল পাখির গানেই প্রাণ ফিরে পায় এই গ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *